বলা হয়েছিল কর্ণফুলী টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার দূরত্ব কমবে ৫৫ কিলোমিটার। দূরত্ব কমানোর সেই পিএবি টইটং সড়ক ফাইলবন্দী হয়ে আছে এক বছর। টানেল সংযোগ সড়কের আনোয়ারা কালাবিবি দীঘির মোড় থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ের ৫৬ কিলোমিটার সড়কটি কবে হবে, আদৌ হবে কিনা বলতে পারছে না কেউই। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে টানেল প্রকল্পের বাস্তবিক সফলতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা।
টানেলে যানবাহন চলাচল বাড়ানো, দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যবসা–বাণিজ্য সমপ্রসারণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ার পরিকল্পনা হিসাবে টানেল সড়ক থেকে কক্সবাজার মূল সড়ক পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার টইটং সড়ক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু গত ১ বছর ধরে প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দী হয়ে আছে। এটি যথা সময়ে অনুমোদিত না হওয়ায় টানেলে গাড়ি চলাচল বাড়ানোসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এলাকাবাসী অতি দ্রুত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। এই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারার কালা বিবির দীঘি হতে চকরিয়া পর্যন্ত ৫৬ কি:মি: সড়ক ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীত হবার পাশাপাশি টানেল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের যে সম্ভাবনা তা আরো বেগবান হবে। আর চট্টগ্রাম– কক্সবাজার মহাসড়কের বিকল্প সড়ক হিসেবে যাত্রী সুবিধা ও চট্টগ্রাম কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে পটিয়া–আনোয়ারা–বাঁশখালী–টইটং সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য গত এক বছর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিগত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিগত সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাট, অর্থপাচার, মুদ্রাস্ফীতিসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় অধিকাংশ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজে প্রভাব পড়েছে। সেই সাথে বিগত সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্পগুলোর নানা দিকও পর্যালোচনা করছে বর্তমান সরকার। যার কারণে প্রকল্পটি এখনো মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা বাঁশখালী চকরিয়াসহ কক্সবাজারের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা। সেই সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত ব্যবস্থায় সুফল ভোগ করবে। টানেলের ব্যবহার বাড়বে এবং টোল আদায়ের মাধ্যমে লোকসান কমিয়ে আনতেও সক্ষম হবে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, টানেলকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে সড়ক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বাড়ানোর লক্ষ্য ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে পটিয়া–আনোয়ারা–বাঁশখালী–টইটং সড়ক উন্নয়ন মেগা প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও অনুমোদনের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বিগত অর্থ বছরে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর টেন্ডার প্রক্রিয়া হওয়ার কথা থাকলেও দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি।
বর্তমানে পিএবি–টইটং সড়কটির আনোয়ারা কালা বিবি দীঘির মোড়ের পর হতে বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর বাজার পর্যন্ত ১০০ ফুট ভূমি অধিগ্রহণ রয়েছে। চাঁনপুর বাজার থেকে চকরিয়া পর্যন্ত সড়কটি মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত রয়েছে। যার কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মানুষকে যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সড়কটি যানবাহন চলাচলে প্রয়োজনের তুলনায় প্রশস্থ না হওয়ায় যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা এখানে লেগেই থাকে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, টানেলকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যবসা–বাণিজ্যের সমপ্রসারণসহ সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১২শ কোটি টাকা ব্যয়ে পটিয়া–আনোয়ারা–বাঁশখালী–টইটং সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পটিয়া–আনোয়ারা–বাঁশখালী–টইটং সড়কের আনোয়ারার কালাবিবির দীঘির মোড়ের পর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫৬ কি:মি: সড়ক ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে উন্নীতকরণ করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে এ সড়কে যানজট–দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগাযোগ সুবিধা লাভ করবে। কক্সবাজারের সাথে চট্টগ্রামের বিকল্প সড়ক হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এটি মাইলফলক হয়ে কাজ করবে। সুত্র, আজাদী
পাঠকের মতামত